কৃষ্ণসাগরের বন্দরে বন্দরে ভাসমান মাইন বসিয়েছে ইউক্রেনের নৌবাহিনী

কৃষ্ণসাগরের বন্দরে বন্দরে ভাসমান মাইন বসিয়েছে ইউক্রেনের নৌবাহিনী

কৃষ্ণসাগরের বন্দরে বন্দরে ভাসমান মাইন বসিয়েছে ইউক্রেনের নৌবাহিনী
কৃষ্ণসাগরের বন্দরে বন্দরে ভাসমান মাইন বসিয়েছে ইউক্রেনের নৌবাহিনী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পানিপথে রাশিয়ার সামরিক অভিযান আটকে দিতে কৃষ্ণসাগরের বন্দরে বন্দরে ভাসমান মাইন বসিয়েছে ইউক্রেনের নৌবাহিনী। এসব ভাসমান মাইন এখন পুরো অঞ্চলজুড়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। গত সপ্তাহেই ইউক্রেনের ওডেসা বন্দর উপকূলে একটি ভাসমান মাইন বিস্ফোরণে এস্তোনিয়ার একটি কার্গো জাহাজ ডুবে গেছে।

ঝড়ের ফলে ইউক্রেনের এসব মাইন কৃষ্ণসাগর থেকে শুরু ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে তীরবর্তী দেশগুলো সতর্কতা জারি করেছে। তুরস্কের উপকূলে ইতোমধ্যে একাধিক মাইন উদ্ধার হয়েছে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এরপর এক মাসেরও বেশি সময় ধরে দেশটির শহরগুলোতে রুশ হামলা অব্যাহত রয়েছে।

সম্প্রতি কৃষ্ণসাগর ও আজভ সাগরের বন্দরগুলোতে হামলা বাড়িয়েছে রুশ নৌবাহিনী। বারদিয়াদস্ক বন্দর রুশ বাহিনীর দখলে চলে গেছে। মারিউপোল অবরুদ্ধ। ওডেসা, পিভদেনি ও চারনোমরস্ক বন্দর ঘিরে রেখেছে রুশ নৌবাহিনী। তাদের অগ্রগতি ঠেকাতে এই বন্দরগুলোর চারপাশে পানির মধ্যে অসংখ্য ভাসমান মাইন পেতে রাখা হয়েছে।

গত সপ্তাহেই এসব মাইনের ভয়াবহতা প্রথমবারের মতো সামনে আসে। কৃষ্ণসাগর উপকূলে পেতে রাখা মাইনের সঙ্গে সংঘর্ষের পর এস্তোনিয়ার মালিকানাধীন একটি কার্গো জাহাজে বিস্ফোরণ ঘটে। এর ফলে জাহাজটি ডুবে যায়। জাহাজের চার নাবিক এখনও নিখোঁজ।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদন মতে, রুশ বাহিনীর যুদ্ধজাহাজ উড়িয়ে দিতে কৃষ্ণসাগরে পেতে রাখা ইউক্রেনের মাইনগুলো এখন দিগভ্রান্ত হয়ে সাগরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মাইনগুলো মূলত পানির মধ্যে তারের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছিল।

কিন্তু ঝড়ের কবলে পড়ে ভাসমান মাইনগুলো ক্যাবল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে। তেমনি একটি মাইন ইউক্রেনের ওডেসা বন্দর থেকে ভাসতে ভাসতে তুরস্কে পৌঁছে যায়।

সোমবার আঙ্কারা জানায়, বুলগেরিয়ার কাছে নিজস্ব উপকূলে দ্বিতীয় ভাসমান মাইন শনাক্ত করা হয়েছে। মাইনটি ইউক্রেন উপকূল থেকে ভেসে আসতে পারে বলে ধারণা তাদের। এটা নিষ্ক্রিয় করতে একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠানো হয়। এর আগে শনিবারও একটি মাইন শনাক্ত করে নিষ্ক্রিয় করেছিল তুর্কি নৌবাহিনী।

ইউক্রেনের স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, রাশিয়ার বাহিনীকে জলপথে আটকে দিতে বন্দরে বন্দরে ভাসমান মাইন স্থাপন করেছে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ।

সপ্তাহেরও বেশি আগে রাশিয়াও সতর্ক করেছিল যে, রুশ সৈন্যদের বিরুদ্ধে কৃষ্ণসাগরে মোতায়েন করা কিছু মাইন ঝড়ের কারণে তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং বসফরাস প্রণালী ও ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত সেগুলো ছড়িয়ে পড়তে পারে।

তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক টুইটে জানিয়েছে, সোমবার কৃষ্ণসাগরে বুলগেরিয়া সীমান্তের কাছে ইগনেদায় একটি মাইন শনাক্ত করা হয়। সেটিকে নিষ্ক্রিয় করার প্রক্রিয়া চলমান।

এর আগে ইস্তাম্বুলের উত্তরে বসফরাসের প্রবেশপথে, রুমেলিফেনেরি থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে এক জেলে একটি মাইন দেখার পর স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে খবর দিলে তুর্কি নৌবাহিনী এটি নিষ্ক্রিয় করে।

তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী শনিবার বলেন, আঙ্কারা ইউক্রেনীয় এবং রাশিয়ান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করবে। বুধবার ইউক্রেনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, রাশিয়ান ফেডারেশন (আরএফ) ইউনিটগুলো কৃষ্ণসাগরে মুক্ত-ভাসমান সামুদ্রিক মাইনগুলো নিষ্ক্রিয় করছে।

ইউক্রেনের এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা মাইনের বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন, ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দারা নিশ্চিত করেছেন যে, ক্রিমিয়ান বন্দর সেভাস্তোপলভিত্তিক আরএফ নৌবাহিনী সামুদ্রিক মাইন ব্যবহার করছে। মাইনগুলো সমুদ্রের স্রোতে ভেসে গেছে। ইতোমধ্যেই ন্যাটো নৌবাহিনী রোমানিয়া, বুলগেরিয়া এবং তুরস্কের জলসীমায় মাইনগুলো খুঁজে পেয়েছে।

মতিহার বার্তা / এম আর টি

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply